প্রবন্ধ- স্বপ্ন বিশ্লেষণ

স্বপ্ন বিশ্লেষণ
-শচীদুলাল পাল

 

 

মানুষের অবচেতন মন যখন অবচেতন মনের উপর প্রধান্য বিস্তার করে তখন মানুষ স্বপ্ন দেখে।স্বপ্ন মানে বিকল্প উপায়ে ইচ্ছাপূরণ। অনেকটা দুধের স্বাদ ঘোলে মিটানোর মতো।আমাদের মনের মধ্যে জমে থাকা পুঞ্জীভূত ইচ্ছা আকাঙ্ক্ষিত কামনা বাসনা অবচেতন স্তরে জমা থাকে সুযোগ পেলেই স্বপ্নের রূপ ধারন করে।
স্বপ্ন মোটামুটি তিনটি স্তর
১. ঘুমের প্রথম ভাগে যে স্বপ্ন দেখে তাতে নানান সমস্যার প্রতিফলন হয়।
২. ২ য় স্তরে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা।
৩. ঘুম ভাঙ্গার আগে যে স্বপ্ন সেটি গুরুত্বপূর্ণ। এই স্বপ্নে যাবতীয় সমস্যার সমাধান হয়।
মনোবিজ্ঞানী ইয়ুং এর মতে স্বপ্ন নিজ ব্যক্তিত্ত্বের প্রতিফলন।
ফ্রয়েডের মতে পুরুষ যদি কোনো নারী আর নারী যদি কোনো পুরুষকে স্বপ্নে দেখে সেটা যৌন সম্ভোগ ইচ্ছার প্রতীক হবে।
মনোবিজ্ঞানী এডলারের মতে স্বপ্নে ক্ষমতা ও ইচ্ছে-পূরণের ব্যাপারটা কে গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ।
অবাধ যৌন সংসর্গের স্বপ্ন — অর্থাৎ কোনো নিকট আত্মীয় সাথে যৌনসুখ উপভোগ করছে মানে সে কোনো সামাজিক অপরাধ মূলক কর্মে যুক্ত হতে পারেন।
স্বপ্নের প্রতীক চিহ্ন গুলি বা দৃশ্য গুলির মধ্যে তার যাবতীয় গুনগুলি উপলব্ধি করা যায়।
একজন মানুষ একটি পরিমিত ঘুমে অনেক ভালো স্বপ্ন দেখতে পারেন কিন্তু শেষ স্বপ্ন অনেক সময় সত্যি হয়।

ঘুমের চেয়ে স্বপ্নের প্রয়োজন অনেক বেশি। পরিবর্তিত মানসিক পরিস্থিতিতে মস্তিষ্ক ও অনান্য স্নায়ু যন্ত্রে জৈব রাসায়নিক নিঃসরণ ঘটে যা স্বপ্নকালে দেখতে পাওয়া যায় সেটা শরীর ও মন উভয়ের পক্ষে হীতকর।
সুতরাং দেহমনের স্বাস্থ্য রক্ষায় স্বপ্নের ভূমিকা অপরিহার্য।।
মনের ভারসাম্য রক্ষা আবিলতা দূর, অনভিপ্রেতের নিষ্কাসন ইত্যাদিতে স্বপ্নের ভূমিকা আছে উল্লেখযোগ্য ভাবেই।

স্বপ্ন এক মানবিক বিকার। কিন্তু দুঃস্বপ্ন ছাড়া কোনো স্বপ্ন ক্ষতিকারক নয়।বরঞ্চ শরীর ও মনের জন্য খুবই প্রয়োজন।
ইচ্ছে করলে মানুষ স্বপ্নকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন । স্বপ্ন শরীর ও মনে প্রভাব বিস্তার করে।মনে স্ফূর্তি আনে।স্বপ্ন সুপ্ত শক্তিকে চেতনস্তরে আনতে সাহায্য করে।ফলে বুদ্ধিবৃত্তি ধীশক্তি ইত্যাদি বাড়ে।ভবিষ্যৎ দর্শন ক্ষমতা বৃদ্ধি হয়।
মনের মধ্যে জমে থাকা উদ্বেগ উৎকন্ঠা দুশ্চিন্তা ঘুমের মধ্যে অনুকুল পরিবেশে মুক্ত বিহঙ্গের মতো ডানা মেলে তখনই মানুষ স্বপ্ন দেখে।
আমাদের মনে যে সুক্ষ অবস্থা থাকে ঘুমের মধ্যে তা জেগে উঠে। স্বপ্ন সর্বসমক্ষে ভাসমান নয়।পর্দার অন্তরালে থাকে।সেজন্য স্বপ্ন কে ব্যখ্যা করা সহজ নয়।বিভিন্ন মানুষের কাছে বিভিন্ন রকম।
বিভিন্ন মনোবিজ্ঞানী মতে সাপের স্বপ্ন যৌনতার প্রতীক। পুরুষ যদি সুগন্ধি দ্রব্যের স্বপ্ন দেখে ব্যক্তিগত ভাবে সে কোনো ঝুট ঝামেলায় জড়িয়ে পড়বে।কিন্তু একটা মেয়ে যদি সুগন্ধি দ্রব্যের স্বপ্ন দেখে তাহলে সে অচিরেই কোনো পুরুষের প্রেমে পড়বে।
স্বপ্ন বিশ্লেষণে গ্রীক দার্শনিক টলেমি থেকে শুরু করে ফ্রয়েড, ইয়ুং,এডলার কয়েকটি প্রতীক সম্বন্ধে একমত যে ত্রিকোনাকৃতি জ্যামিতিক ছক বা কোণ যৌনতার প্রতীক,স্ত্রী যৌনাঙ্গের সাথে সাদৃশ্য। আমাদের তন্ত্রশাস্ত্রে ত্রিকোণ যন্ত্রকে যৌনতা সূচক হিসাবে কল্পনা করা হয়।
সব মনোবিজ্ঞানীদের মতে স্বপ্নের গভীরে অন্তঃসলিলা চোরাস্রোত প্রবহমান। একথা অনস্বীকার্য।

সাইকোএনালিষ্টদের স্বপ্ন বিশ্লেষণে কিছু প্রতীকের অন্তর্নিহিত অর্থ এইরকম।
ঘোড়া — সাদা ঘোড়া, সুখ আর অর্থ।কালো ঘোড়া — সাফল্য,
ছুটন্ত ঘোড়া — দ্রুতগামী জীবন যাত্রা।
সাপ– প্রেম, কাম, নানাপ্রকার যৌন সম্পর্ক। বংশবিস্তার।
জেব্রা – কাজে আগ্রহ
ভালুক – প্রতিযোগিতা
টিকটিকি– চারিদিকে শত্রুভাব
মাছ — বিত্তবান বন্ধ, আত্মীয় সজন।
ঈগল — অনেক বাধার পর বিজয়
বাদুড় — দুঃ খ ও বিপর্যয়।
ডিমপূর্ণ পাখির বাসা- কর্মে সাফল্য।
হাতি — প্রচুর স্থাবর সম্পত্তির মালিক।
আপেল — সুখ
চোখ — আশঙ্কা
ভূত– দুশ্চিন্তা বিবাদ অশান্তি
ষাঁড় – প্রেমে পড়ার তীব্র বাসনা
সমুদ্র — বিবাহিত জীবনে শান্তি
প্রজাপতি — প্রেম, যৌনতা, বিবাহের ইচ্ছা।
অভিনেতা অভিনেত্রী — আনন্দ যৌন সঙ্গম সম্পদ।
চিকিৎসক — সুস্বাস্থ্য প্রাচুর্য আনন্দ।

Loading

Leave A Comment